Home> রাজ্য
Advertisement

National Street Theatre Day: পথনাটক করতে যে অধ্যবসায় দরকার সেটা আজকাল অনেকেরই নেই: দেবাংশু ভট্টাচার্য

সৃষ্টিশীলতা আসছে বরং মার্কেটিংয়ের চকচকে মাথার লোকজনদের থেকে। আগে রাজনৈতিক মানুষের জীবনাদর্শ থেকে স্বাভাবিক ভাবে যেটা বেরিয়ে আসত, এখন সেটা মার্কেটিংয়ের তাড়না থেকে আসছে।

National Street Theatre Day: পথনাটক করতে যে অধ্যবসায় দরকার সেটা আজকাল অনেকেরই নেই: দেবাংশু ভট্টাচার্য

সৌমিত্র সেন

মানুষের সঙ্গে সংযোগ, নাটকের এটাই মূল কথা। সেই সংযোগেরই অন্যতর ভুবন রচনা করেছিলেন সফদর হাসমি। করেছিলেন স্ট্রিট থিয়েটার বা পথনাটকের মাধ্যমে। আজ, ১২ এপ্রিল 'ন্যাশনাল স্ট্রিট থিয়েটার ডে'। এদিনটি আসলে সফদর হাসমির জন্মদিন। তাঁর জন্মদিনটিকেই দেশজুড়ে পথনাটক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

আজীবন বামমনস্ক, বামপন্থী, বামভাবনায় জারিত-ভাবিত সফদর পলিটিক্যাল থিয়েটারের ক্ষেত্রে অন্যতম বিশিষ্ট মুখ। 'পিপলস থিয়েটার ফ্রন্ট' বা 'জন নাট্য মঞ্চে'র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। মাত্র চৌত্রিশটি বসন্ত পার করতে পেরেছিলেন সৃষ্টিশীল এই মানুষটি। 'হাল্লা বোল' নামের একটি পথনাটকে পারফর্ম করার সময়ে নিহত হন। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র সফদর ছাত্রাবস্থাতেই এসএফআই এবং আইপিটিএ-- দুটোর সঙ্গেই সমান ওতপ্রোত ভাবে সংযুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। জরুরি অবস্থার সময়ে তাঁর 'কুর্সি কুর্সি কুর্সি' বিপুল সাড়া ফেলে দিয়েছিল। গাড়োয়াল, কাশ্মীর ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য পড়াতেন সফদর। মোটামুটি ১৯৭৭ সালের পর থেকে সক্রিয় ভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। 'গাঁও সে শহর তক', 'তিন ক্রোর', 'অউরত', 'খিলতি কলিয়াঁ' তাঁর কিছু মনে রাখার মতো কাজ। 

আজও, এতগুলি বছর পরেও সফদর হাশমির কাজের তাৎপর্য এতটুকু কমেনি, তাঁর সৃষ্টিশীলতার অভিঘাত আজও অনুভূত হয়। কিন্তু ভারতে বা এই বাংলায় পথনাটক আজ ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে? বাংলার রাজনীতিতে পথনাটকের বিশেষ স্পেস ছিল, গুরুত্বও ছিল। একদিন 'জাতীয় পথনাটক দিবস' পালন করে কি হাত ধুয়ে বসে থাকব আমরা? পথনাটক কি আজ আর সেই গুরুত্বের জায়গায় আসীন আছে? আজকে যাঁরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাঁরা কি আদৌ পথনাটক করার কথা ভাবেন?

zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালের তরফে এই সময়ের যুব তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁর কাছে আজকের রাজনীতির সাপেক্ষে পথনাটক ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল।

দেবাংশু ব্যাখ্যা করেন, 'মানুষের হাতে এখন সময় কম। সে এখন রেডিমেড জিনিস চাইছে, সহজপাচ্য জিনিস চাইছে, এমন জিনিস যেটা চিবোতে হবে না। পথনাটক করতে যে অধ্যবসায় দরকার, যেখানে ১০জন মানুষকে একসঙ্গে বসে একটা বিষয় ঠিক করতে হয়, স্ক্রিপ্টিং করতে হয়, সেটার মহড়া দিতে হয়, কম করে ৭-১০ দিন রিহার্সাল তো দরকারই-- এই জিনিসটাই এখন হচ্ছে না; মানুষ আজকাল আর এত ঝামেলায় যেতে চাইছে না। সে বরং একদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা স্টেটাস দিয়ে বাকি ছ'দিন পাবজিতে বোম মারবে!'

সাম্প্রতিক দেশীয় রাজনীতির দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ তির্যকতার সুরে দেবাংশু আরও বলেন, 'আসলে রাজনীতি থেকে সৃষ্টিশীলতা কমছে। সৃষ্টিশীলতা আসছে বরং মার্কেটিংয়ের চকচকে মাথার লোকজনদের থেকে। আগে রাজনৈতিক মানুষের জীবনাদর্শ থেকে স্বাভাবিক ভাবে যেটা বেরিয়ে আসত, এখন সেটা মার্কেটিংয়ের তাড়না থেকে আসছে।'

কিন্তু কেন সৃষ্টিশীলতা রাজনীতি থেকে আসছে না? 

তৃণমূলনেতার ব্যাখ্যা, 'আসলে আজ যিনি কোনও একটি দলে থেকে কোনও একটি স্লোগানের জন্ম দিলেন, তিনি কোনও একদিন দলবদল করে অন্য দলে গিয়ে অন্য কোনও কিছু বললেন। ফলে বিষয়টার আর গুরুত্ব থাকল না।' 

দেবাংশু আরও বলেন, 'পথনাটক করতে গেলে যে নিষ্ঠা একাগ্রতা ও সৃষ্টিশীলতা দরকার, সেটা এখন আর সম্ভব নয়, কেননা এখন সৃষ্টিশীলতার চাহিদা নেই। এখন মানুষ ভাবতে চায় না, সহজ এনটারটেনমেন্টে মজে থাকতে চায়। 

কেন চায়?

সেটাও খুব সহৃদয়তার সঙ্গে ব্যাখ্যা করেন দেবাংশু। তিনি বলেন, 'মানুষকে দোষও দেওয়া যায় না। সে কখন ভাববে? তাকে তো সারাক্ষণ ইঁদুরদৌড়ে সামিল হতে হচ্ছে! সারাদিনের কাজের পর ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে বাড়িতেও সামলাতে হয় হাজার ঝামেলা। তার সময় কই?  বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে-- মানুষ এখন সদাব্যস্ত, তার হাতে সময় খুব কম, ফলে গভীর ভাবে কোনও কিছু ভাবতে পারছে না, তাই সে সহজপাচ্য জিনিস চাইছে তাতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠছে, আর এসবের জেরে তার সৃষ্টিশীলতাও দিন দিন কমছে। ফলে সৃষ্টিশীল না হলে যেগুলি করা সম্ভব নয়, সেগুলি হচ্ছেও না। অর্থাৎ, গোটা ব্যাপারটা পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোত।

দেবাংশুকে প্রসঙ্গক্রমে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি তো 'খেলা হবে'র মতো গান (যাকে খানিকটা স্লোগানও বলা চলে বইকি) তৈরি করেছেন রাজনৈতিক ভাবনা থেকেই। তিনি কি কখনও পথনাটকের করার কথা ভেবেছেন বা ভাববেন? 

দেবাংশু জানান, 'জানি না, সম্ভব হবে কিনা। গানের চেয়ে নাটক ব্যাপারটা আর একটু বড় বিষয়। ফলে তার জন্য প্রস্তুতি দরকার। তবে কখনও পথনাটক করার কথা ভাবলে দেখব, তার লেংথ যেন কোনও ভাবেই ১০ মিনিটের বেশি না হয়। এমন জিনিস যেন তার ভেতরে থাকে, যেটা মানুষকে ১০ টানা মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখতে পারে। ভারী ভারী জিনিস এর মধ্যে যেন না থাকে। যেন কিছুটা এন্টারটেনমেন্ট থাকে। আর থাকে দু'একটা এমন শব্দবন্ধ, যা চট করে মানুষের মনে গেঁথে যাবে। যদি এমন ভাবে করা যায় কোনও দিন, নিশ্চয়ই পথনাটক নিয়ে ভাবব।'  

(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

Read More