জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ছাগল চুরির ঘটনায় গ্রাম্য সালিশি সভায় ছাগলের মালিক এক হতদরিদ্র মহিলাকেই একঘরে করে আর্থিক জরিমানার নিদান গ্রামের মাতব্বরদের! ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য রায়গঞ্জের মধুপুর-সংলগ্ন বারোদুয়ারি এলাকায়।
জানা গিয়েছে, গত বুধবার বারোদুয়ারির বাসিন্দা ফুলি রায়ের একটি ছাগল হারিয়ে যায়। অনেক খুঁজেও সেটি না পেয়ে রায়গঞ্জ থানার দ্বারস্থ হন ফুলি। এরপর শনিবার বারোদুয়ারির হাটে এক মাংসবিক্রেতার কাছে তাঁর ছাগলটিকে দেখতে পান তিনি। ছাগল নিতে গেলে বিবাদ বাধে উভয় পক্ষের। খবর পেয়ে রায়গঞ্জ থানার পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই মাংসবিক্রেতাকে আটক করার পাশাপাশি তাঁর কয়েকটি ছাগলও নিয়ে যায়। আর এতেই বাধে গোল৷
আরও পড়ুন: Arambagh: এবার কি আগুন-দাম হবে আলু, কাঁচালঙ্কার? অকালবৃষ্টির জলে হাবুডুবু মাঠের পর মাঠ...
এরপর ওই মাংসবিক্রেতা ছাড়া পেলে গ্রামে সালিশি সভা ডাকা হয়। গতকাল, রবিবার দুপুরে বারোদুয়ারি হাটখোলা চত্বরে এই সালিশি সভা হয়। অভিযোগ, সেখানে উভয় পক্ষকে ডাকা হলে মাংস ব্যবসায়ীর ক্ষতিবাবদ একতরফা ফুলি রায়কে প্রায় ৯ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিদান দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে তাঁকে বাড়ি থেকে না বেরনোর, এমনকি বাইরে বেরোলে তাঁকে 'দেখে নেওয়া'র হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর থেকেই ফুলি রায় রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ফুলি রায়ের স্বামী অসুস্থ, সন্তানেরা ছোট। তাঁর কাঁধেই সংসারের দায়িত্ব। প্রশ্ন উঠছে, অসুস্থ স্বামী এবং ক্ষুদে সন্তানদের নিয়ে নুন-আনতে-পান্তা-ফুরোনো এক সংসারে যে-অসহায় মহিলার এরকম নিত্য সংগ্রাম, তাঁকে কেন এত কঠোর নিদান গ্রাম্য সালিশি সভার? তা ছাড়া ঘটনাটিতে পুলিস হস্তক্ষেপ করলেও কেন ফের সালিশি সভা?
পুলিসকে জানিয়েই এই সালিশি সভা ডাকা হয়েছে বলে অবশ্য দাবি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের স্বামী সমীর সোরেনের। তিনি আরও জানান, মীমাংসা করার জন্য সালিশি সভায় ডাকা হলেও ফুলি রায়কে কোনও জরিমানা করা হয়নি বা তাঁকে কোনো কঠোর নিদানও দেওয়া হয়নি। কিন্তু সত্য যা-ই হোক, একদিকে যখন মাতব্বরদের মাতব্বরি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তেমনই প্রশ্ন উঠছে পুলিসের ভূমিকা নিয়েও।
আরও পড়ুন: Malbazar: নকশালে ভিড়! শীত পড়তেই রবিবারে পিকনিকে মাতল পাহাড়...
ঘটনাটি শেষমেশ প্রশাসনের কানে গেলে প্রশাসন কী পদক্ষেপ করে, এখন সেটাই দেখার বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের! এদিকে ফুলি রায়ের সঙ্গে ঘটা এই ঘটনায় এলাকার অন্যান্য ছাগলপালকেরাও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানান তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা লতা সোরেন গঙ্গা ছেত্রীরা জানান, এলাকায় নেশাগ্রস্তদের বাড়বাড়ন্তের কারণেই সেখানে প্রায়শই ছাগল চুরির ঘটনা ঘটছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)