Home> রাজ্য
Advertisement

বাল্যবিবাহ নিয়ে প্রহসন! বিয়ে আটকালো সাহসিনীই, বিতর্কে পড়লেন স্বেচ্ছাসেবী-পুলিস-বিডিও কর্তারা

মেয়েটির পরিবার কী বলছে? নাবালিকার বাবা জয়নাল সেখের কথায়,  “৬ মেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার। বাল্যবিবাহের কুফল বা আইনি সমস্যার কথা এত জানতাম না। অনেক কষ্টে একটা ভাল ছেলে পেয়েছিলাম।”

বাল্যবিবাহ নিয়ে প্রহসন! বিয়ে আটকালো সাহসিনীই, বিতর্কে পড়লেন স্বেচ্ছাসেবী-পুলিস-বিডিও কর্তারা

সন্দিপ ঘোষ চৌধুরী, কাটোয়া 

বয়স ১৬। স্বপ্নে বিভোর দুই চোখ। পড়াশুনা করে অনেক বড় হতে হবে। তাই, অভাবের পরিবারে তিল তিল করে নিজেকে গড়ে তুলছিল কাটোয়ার মঙ্গলকোট ব্লকের কুলশুনা গ্রামের মেয়ে সাহসিনী (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু তাল কাটল স্বাধীনতা দিবসের আগেই। ৭১ বছর পেরিয়ে যখন দেশ স্বাধীনতা উদযাপনে প্রস্তুত নিচ্ছে, সেই দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ের নীরবে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে স্বাধীনতা। কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তার মেয়েবেলা। অভাবের তাড়নায় নাবালিকাকে বিয়ে দিতে চাইছে তার পরিবার। কিন্তু বেঁকে বসে নাবালিকা। মা-বাবাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় এখনও পড়তে চায় সে। বিয়ে কোনও মতেই করবে না। এ দিকে ১৭ অগস্ট বিয়ের দিন পাকা। তারপর...

আরও পড়ুন- চোখে পড়েছে ছানি, সুন্দরবনে হাসপাতালে হেঁটে এলেন বাঘমামা

মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই না-কি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার বাবা জয়নাল সেখ এবং মা আজমীরা বিবি। মেয়ে বারংবার বাবা মায়ের কাছে তার ইচ্ছের কথা জানায় কিন্তু মেয়ের কাতর অনুরোধ কানে তোলেননি তাঁরা। ১৭ ই অগস্ট স্থির হয় বিবাহের দিন। উপায়ান্তর না পেয়ে অবশেষে চাইল্ড লাইন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দ্বারস্থ হয় সাহসিনী। ১৬ অগস্ট সংগঠনের প্রতিনিধি অরূপ সাহা ও রাজকুমার কোনায় মঙ্গলকোট ব্লক প্রশাসনকে ঘটনাটি জানান। থানাতেও জানানো হয় বলে দাবি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার।

এর পর বিডিও প্রতিনিধি, পুলিশ, চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধি এবং মঙ্গলকোট এডুকেশন ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির সদস্য সম্রাট মুন্সী কে নিয়ে তৈরি একটি দল গিয়ে পৌঁছয় নাবালিকার বাড়ি। পরিবারের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ‘কাগুজে অভিযান’ সম্পন্ন করেন তাঁরা।

fallbacks

আরও পড়ুন- যাত্রীর পিঠের ব্যাগের চেন খুলতেই কপালে ঘাম এল রেলপুলিসের!

তবে, এই অভিযানের পর মোড় নেয় নতুন বিতর্কে।

গত ১৭ অগস্ট সন্ধে বেলায় মঙ্গলকোট থানায় হাজির হয় ওই নাবালিকা। নাবালিকার কাছে থেকেই জানা যায়, বিয়ে বন্ধ করার কোনও রাস্তা না দেখতে পেয়ে বাড়ির থেকে পালিয়ে গিয়েছিল দু’দিন আগেই। সে জানেই না তার বিয়ে বন্ধের জন্য কেউ বাড়িতে গিয়ে পরিবারের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে এসেছে। যা শুনে অবাক হয়েছেন পুলিস কর্তারা। কিছুটা বিপাকেও পড়েন তাঁরা। কারণ এই অভিযানের পিছনে কিছু পুলিসকর্মীও ছিল।

এর পর নড়ে চড়ে বসেন পুলিস কর্তারা। দায় এড়াতে সঙ্গে সঙ্গে চাইল্ড লাইন ও বিডিও অফিসারকে ফোন করা হয়। ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে একে অপরকে দোষারোপ শুরু করে। শেষমেশ ১৮ অগস্ট মেয়েটিকে পরিবারের হাতে তুলে দেয় পুলিস।

আরও পড়ুন- কেরলের পাশে পশ্চিমবঙ্গ, ১০ কোটি টাকা ত্রাণ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতার

কিন্তু এই ঘটনায় বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশ্ন এক, বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে কাগুজে অভিযান চলল। কিন্তু যাকে কেন্দ্র করে অভিযান, তার খোঁজ একবারও নেওয়া হল না কেন? প্রশ্ন দুই, বিডিও, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, পুলিসের মধ্যে কেনই বা এতটাই বোঝাপড়ার অভাব? প্রশ্ন তিন, খাতায় কলমে মেয়েটির বাল্যবিবাহ বন্ধ করা গিয়েছে। কিন্তু মেয়েটির অবস্থান এবং পরিস্থিতি একবারও খতিয়ে দেখা হল না কেন?  প্রশ্ন আরও অনেক রয়েছে... কিন্তু উপায় কী?

fallbacks

মঙ্গলকোটের বিডিও মুস্তাক আহমেদ পরে সাফাই দেন, যে মেয়েকে না দেখে মুচলেকা নেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে পরে তিনি জানতে পেরেছেন। বিডিও আরও জানিয়েছেন, চাইল্ড লাইন সংস্থার প্রতিনিধিরাও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে অবগত ছিল। ভবিষ্যতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তার জন্য তাদের সাবধান করা হয়েছে।

কিন্তু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বক্তব্য কী?

চাইল্ড লাইন প্রতিনিধি অরূপ সাহা জানান "ব্লক প্রতিনিধিরা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।" পরে অবশ্য নিজের দোষ স্বীকার করেন তিনি।

মেয়েটির পরিবার কী বলছে? নাবালিকার বাবা জয়নাল সেখের কথায়,  “৬ মেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার। বাল্যবিবাহের কুফল বা আইনি সমস্যার কথা এত জানতাম না। অনেক কষ্টে একটা ভাল ছেলে পেয়েছিলাম।” তবে, তিনি যে ভুল বুঝতে পেরেছেন হাসি মুখে স্বীকার করেন জয়নাল। বলেন, “মেয়ের বয়স ১৮ বছর হলেই তারপর বিয়ে দেব।”

কিন্তু পড়াশুনার কি হবে সাহসিনীর!

সে বিষয়ে এগিয়ে এসেছেন খোদ মঙ্গলকোট থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত। প্রসেনজিত্ বাবু বলেন, "আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে প্রতি সপ্তাহে মেয়েটির খোঁজ খবর নেব। ভবিষ্যতে ওর পড়াশুনা করতে যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয় তার ব্যবস্থাও করবো। প্রমিস।"

Read More