জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, আচ্ছা বলুন তো, ২০২৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপজায়ী ভারতীয় দলের একমাত্র বাঙালি সদস্য় কে? আপনি হয়তো সবার আগে এটাই ভাববেন যে, আদৌ রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) সংসারে কোনও বাঙালি ছিলেন! হ্য়াঁ বিলক্ষণ ছিলেন। এখন প্রশ্ন কে তিনি? রোহিত শর্মাদের (Rohit Sharma) বিশ্বকাপ জেতাতে কী করেছেন? কলকাতা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টা দূরে কোলাঘাট। সেখানকার রূপনারায়ণের তীরবর্তী জামিত্যা গ্রামের চাষি পরিবারের সন্তান দয়ানন্দ গরানি (Dayananda Garani)। ক্রিকেটার হওয়া স্বপ্ন দেখা বাঙালি, জাতীয় দলের হয়ে না খেলেও, তিনি আজ বিশ্বকাপজায়ী ভারতীয়। যার জন্য় আজ গর্ব করছে গোটা বাংলা।
আরও পড়ুন: বিরাটদের 'বন্দে মাতরম', কোরাসে ৩৩ হাজার দর্শক, কুর্নিশ রহমানেরও...
এবার আসা যাক দয়ানন্দের কথা। বিগত চার বছর তিনি ভারতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য় অঙ্গ। সাল ২০২০। দয়ানন্দ আইপিএলে পঞ্জাব কিংসের হয়ে থ্রো ডাউন বিশেষজ্ঞ হয়ে কাজ করছিলেন। ক্রিস গেইল, অনিল কুম্বলে ও কেএল রাহুলের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করেছেন। সেই সময়ে ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়ায় সফররত। বিরাট কোহলিদের দলের থ্রো ডাউন বিশেষজ্ঞ, রঘু রাঘবেন্দ্রর করোনা আক্রান্ত হওয়ায়, দয়ানন্দের জাতীয় দলের দরজা খুলে যায়। তারপর থেকে ভারতীয় দলের ভরসার আরেক নাম দয়ানন্দ। বিরাট-রোহিতরা মনের মতো থ্রো ডাউন অনুশীলন করাতে তিনি দক্ষ। পুরো দলের অন্য়তম প্রিয় পাত্র তিনি। কোলাঘাট থেকে বার্বাডোজ, বার্বাডোজ থেকে কোলাঘাট। একটা বৃত্ত, একটা স্পপ্নের নাম দয়ানন্দ। দেশক বিশ্বকাপ জিতিয়ে জামিত্যা গ্রামে ফিরে আসার পর, তিনি গ্রামবাসীর ভালোবাসা, সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছায় ভেসে গিয়েছেন। মেদিনীপুরের ভূমিপুত্রের জন্য় সকলে আজ গর্বিত।
দয়ানন্দ একদম ছোট থেকেই ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি যোগ ব্যায়ামেও ছিলেন পারদর্শী। ক্রিকেটার হওয়ারই স্বপ্ন ছিল তাঁর দু'চোখে। দয়ানন্দ ক্লাব ক্রিকেট খেলেছেনও। কলকাতার বরানগর স্পোর্টিং ক্লাব ও হোয়াইট বর্ডার স্পোর্টিং ইউনিয়নে খেলা দয়ানন্দ কিন্তু নিজের পরিবারের কাজটাও দারুণ জানেন। কী পারেন না তিনি? ধান রোয়া থেকে শুরু করে পাওয়ারটিলার চালানো। দয়ানন্দ জানেন সবটাই। তিনি ভুলতে পারবেন না যে, একসময়ে চাষ করেই খেলার খরচ জোগাড় করেছেন। শুনলে অবাক হবেন যে, ২০১৩ সালে কলকাতা পুলিসের হয়ে গ্রিন পুলিশের কাজও করেছেন দয়ানন্দ। কলকাতা পুলিশেরই দেবরাজ নাহাটার পরামর্শেই দয়ানন্দ পরে ফিটনেস ট্রেনিং এবং ম্য়াসিওর কোর্স করেছেন। বাংলার রঞ্জি দলের সঞ্জীব দাসের থেকে অনেক সাহায্য় পেয়েছেন দয়ানন্দ। ২০১৬ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ রঞ্জি দলের সঙ্গে কাজ করতে করতেই তিনি থ্রো ডাউনে নিজেকে অন্য় উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন।
দয়ানন্দ নিজে ক্রিকেটার হতে পারেননি ঠিকই। তবে তিনি চান তাঁর গ্রামেরই কেউ বা কারা দাপিয়ে ক্রিকেট খেলুক। গ্রামের মানুষকে এতটাই ভালোবাসেন যে, তাঁর হাতে গড়ে উঠেছে শহিদ মাতঙ্গিনী স্পোর্টস অ্যাকাডেমি। যেখানে ছেলেমেয়েরা ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নেন। বাড়ি ফিরেই সেই অ্যাকাডেমিতে অনেকটা সময় দেন। দয়ানন্দ জানিয়েছেন এবার থেকে বাড়ি ফিরলে তিনি ১০০০টি করে গাছের চারা রোপণ করবেন। আপাতত দয়ানন্দ তাঁর গ্রামের বাড়িতেই থাকবেন। আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরে তাঁকে পাওয়া যাবে ফের দেশের জার্সিতে।
আরও পড়ুন: 'আমি তোমার ছায়ায় ছায়ায় থাকি মা', আদরের চাদরে রোহিত... চোখ ভিজবে আপনারও
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)