)
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: গুজরাট হিংসায় বিলকিস বানোর ধর্ষণ ও তার পরিবারের ১১ জনের হত্যাকারীরা এখন জেলের বাইরে। গুজরাট সরকারের ক্ষমা প্রদর্শনের ফলে ওই ১১ কয়েদী এখন মুক্ত। এনিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তবে যেভাবে এর প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। মানুষের মধ্য়ে মানবিকতা কি মরে গেল? প্রশ্ন তুলে দিলেন বিশিষ্ঠ অভিনেত্রী শাবানা আজমি। সংবাদমাধ্য়মে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে শাবানা বলেন, ভেবেছিলাম ওইসব কয়েদিদের ছেড়ে দেওয়ার পর দেশজুড়ে বিশাল প্রতিক্রিয়া হবে। একদিন, দুদিন, তিনদিন অপেক্ষা করলাম। মিডিয়া বা অন্য কোথাও সেরকম কিছু দেখলাম না। একদিন আমি কয়েকজনের সঙ্গে একটা আলোচনাসভায় বসেছিলাম। একজন বলল, ওরা তো অনেকদিন জেল খেটেছে। এখন তাদের ছেড়ে দেওয়া হল কী ক্ষতি! ওরা সবাই জানে ওই ১১ জন কী করেছে। ওদের কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আমরা মনে হয়ে বিলকিস বানোর সঙ্গে কী হয়েছে তার কোনও ধারনাই নেই ওদের। ওই ১১ জনকে শুধু ছেড়েই দেওয়া হয়নি। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। লাড্ডু বিলি হয়েছে। ভেবে দেখুন আমরা সমাজকে কী বার্তা দিচ্ছি? কী বার্তা দিচ্ছি দেশের মেয়েদের? যেদিন ওদের ছেড়ে দেওয়া হয় সেই দিনই সরকার নারী শক্তির কথা বলেছিল। ভাবতে পারছি না, নির্ভয়া কাণ্ডে গোটা দেশ রাস্তায় নেমেছিল। বিলকিস বানোর ক্ষেত্রে কেন নয়?
আরও পড়ুন- Child Death: স্ত্রীর ব্রতে আটকে ডাক্তার, মায়ের কোলেই বেঘোরে মরল একরত্তি
মুসলিম বলেই কি বিলকিস বানোর জন্য কেউ সরব হল না? শাবানা আজমি বলেন, এর থেকে বেশি আর কী ভাবব বলুন? দেশে এখন শুধু হিন্দু মুসলিম বিতর্ক। আমরা তো মনে হয় এরকম একটা কাণ্ড করে দেশে আরও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করাই লক্ষ্য। সেই রেষারেষিকে ভোটের কাজে লাগানো। এর থেকে আমার আর কিছু মনে হয় না। ওই ১১ জনের পক্ষে বলা হয়েছে, ওরা ব্রাহ্মণ। ওদের মধ্যে একটা 'সংস্কার' রয়েছে। অপরাধ করেছে কী করেনি তাও জানি না। ভেবে দেখুন ১১ জনকে অপরাধী ঘোষণা করে তাদের আদালত সাজা দিয়েছে। তারপরেও কেউ বলছে ওইসব লোকজন অপরাধ করেনি! কেন্দ্রের কোনও নির্দেশ ছাড়া গুজরাট সরকার এমনটা কীভাবে করতে পারে? মহিলা কমিশন থেকে মানবাধিকার কমিশন কেন নীরব? বিজেপির মহিলা নেতারা কেন নীরব? এটা পার্টি লাইনের জন্য? মানবিকতা বলে কিছু কি আর বেঁচে নেই? এ কোন সমাজে বাস করছি?
বিলকিস বানোকে কী বলবেন? শাবানা বলেন, দেখুন আমার বলার কিছু নেই। শুধু বলব আমি স্তম্ভিত। এতবড় ট্রাজিডির পরও বিলকিস সাহস হারায়নি। অপরাধীদের শাস্তি দিয়েছিল। এখন ওইসব কয়েদিদের ছেড়ে দেওয়া পর বিলকিসের স্বামী বলছে ও যখন জীবনকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল তখনই এমন ঘটনা ঘটল। ওই আইনজীবী বলছে, একলা ও আর কত লড়াই করবে? এসব হওয়ার পরও কি আমাদের এগিয়ে আসা উচিত নয়? এদেশে যেসব মহিলা রোজ ধর্ষণের হুমকি পান তাদের কি একটা নিরাপত্তা বোধের বার্তা দেওয়া যেত না? বিলকিসের সামনে আমি দাঁড়াব কী করে? দেশের মহিলা সাংসদদের কী হল? তার কীভাবে চুপ করে রয়েছেন?
Newsletter
