মৌমিতা চক্রবর্তী: দলের সংগঠনের বেহাল দশা। জনপ্রতিনিধির সংখ্যা শূন্য। মজা করে অনেকেই বলেন, "ফ্ল্যাগ ধরার লোক নেই"। এই অবস্থায় গোষ্ঠীকোন্দলে নাস্তানাবুদ ফরওয়ার্ড ব্লক (All India Forward Bloc)। দলের রাজ্য সম্পাদকের উপর ক্ষোভ উগরে আলাদা মঞ্চ গড়লেন আলি ইমরান রামজ। পাল্টা বহিষ্কারের 'জুজু' দেখালেন রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়।
ফরওয়ার্ড ব্লকের (All India Forward Bloc) পতাকা পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। ১৯৪৮ সাল থেকে ফরোয়ার্ড ব্লকের দলীয় পতাকায় বাঘের সঙ্গে কাস্তে-হাতুড়ি রয়েছে। কিন্তু আলি ইমরান রামজদের অভিযোগ, ফরওয়ার্ড ব্লকের বর্তমান নেতারা হঠাৎ পতাকা পরিবর্তন করতে চাইছেন। তাঁদের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে, কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে প্রস্তাব পাশ করানো হয়। ২২ জুন নতুন পতাকা নিয়ে অনুষ্ঠান করতে চায় দলের ওই অংশ। বিক্ষুব্ধদের প্রশ্ন, "১৯৪৮ সাল থেকে এই পতাকা নিয়েই আমরা লড়াই করছি। তাহলে অশোক ঘোষ, চিত্ত বসুরা কি ভুল করেছিলেন?"
একই সঙ্গে নরেন চট্টোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেন আলি ইমরান রামজ। রাজ্য সম্পাদক দল বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে গুরুতর অভিযোগ করেন প্রাক্তন ওই বিধায়ক। তিনি বলেন, "নরেন চট্টোপাধ্যায় নিজের গ্রুপ বানাতে গিয়ে দলের ক্ষতি করছেন। অশোক ঘোষের মৃত্যুর পর, এমন সিদ্ধান্ত কেন? রাজ্য-জেলার সঙ্গে আলোচনা না করে এমন সিদ্ধান্ত কেন?" রাজ্য সম্পাদকের সঙ্গে তৃণমূল-বিজেপির আঁতাতেরও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
ফরওয়ার্ড ব্লকের বিক্ষুব্ধ অংশ, আর্থিক তছরুপেরও ভয়ঙ্কর অভিযোগ তুলেছে। তাঁদের প্রশ্ন, "পার্টি অফিসকে ব্যক্তি মালিকানায় পরিণত করছেন নরেন চট্টোপাধ্যায়। উত্তর ২৪ পরগনার পার্টি অফিস সোনার দোকানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। কোচবিহারেও তাই। সালামি নেওয়া ৩৮ লক্ষ টাকা কোথায় গেল?" নরেন চট্টোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় তুলে আলি ইমরান রামজের দাবি, "নরেনবাবুর উপর তৃণমূলের প্রভাব রয়েছে।"
সোমবার কলকাতা, হাওড়া, বাঁকুড়া, উত্তর দিনাজপুর-সহ, ৯টি জেলাকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন আলি ইমরান রামজ। সাড়ে চার হাজার কর্মী নিয়ে 'আজাদ হিন্দ ফৌজ' নামে এক পৃথক মঞ্চ তৈরি করেন প্রাক্তন বিধায়ক। পুরনো পতাকা নিয়েই তাঁরা আসন্ন প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করবেন বলে জানান।
যাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেই নরেন চট্টোপাধ্যায় কী বলছেন?
ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকের দাবি, "এরা অন্য দলে যাওয়ারর জন্য পা বাড়িয়ে রয়েছে। পতাকা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত কাউন্সিলের। পার্টি অফিস ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমার নয়, জেলার। এদের মধ্যে একজন সাসপেন্ড হয়েই ছিলেন। বাকিদের নিয়ে ২৭ জুন বৈঠক রয়েছে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলের সিদ্ধান্ত না মানলে, বহিষ্কার করা হবে।"
কিন্তু দলের যখন দুর্দিন। দলের সংগঠনের হাল যখন শোচনীয়। তখন ব্যক্তিস্বার্থ পাশে রেখে ফরওয়ার্ড ব্লকের শীর্ষ নেতৃত্ব কি একটু দায়িত্বশীল হতে পারতেন না? অন্তর্কলহ দূরে সরিয়ে তাঁরা কি কর্মীদের কথা ভাবতে পারতেন না? প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই।