জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সহজ পাঠের গপ্পো’(Sohoj Pather Goppo) মনে দাগ কেটেছিল আপামর সিনেমাপ্রেমীদের। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্প ‘তালনবমী’ অবলম্বনে ছবিটি তৈরি করেছিলেন পরিচালক মানস মুকুল পাল(Manas Mukul Pal)। সমালোচক থেকে শুরু করে দর্শক, সকলের প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছিলেন পরিচালক। কিন্তু সেই সিনেমা রিলিজের ছয় বছর কেটে গেলেও আর কোনও ছবি পরিচালনায় দেখা মেলেনি মানস মুকুলের। কোথায় গেলেন পরিচালক?
আরও পড়ুন- Arun Roy: দেবের ‘বাঘাযতীন’ মুক্তির আগেই দুঃসংবাদ, ক্যানসারে আক্রান্ত পরিচালক অরুণ রায়...
‘সহজ পাঠের গপ্পো’-র পর কোন ছবি নিয়ে ফিরছেন তিনি, তা আগেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ছবিই বা কোথায়? নেটপাড়ার প্রশ্নের মাঝে মুখ খুললেন পরিচালক। সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচালক লেখেন, ‘প্রায় ছ' বছর হতে চললো সহজ পাঠের গপ্পো রিলিজ হয়েছে। শেষ কয়েক বছরে এমন একটা দিনও যায়নি - যেদিন মেসেজে বা সরাসরি আমি এই প্রশ্নের সম্মুখীন হইনি - 'আপনার পরের ছবি কবে দেখতে পাব?'।যাঁরা আমার কাজ ভালোবেসেছেন এবং সেই ভালোবাসার জোরেই প্রতিনিয়ত আমাকে এই প্রশ্নটি করেন- তাঁদের জ্ঞাতার্থে দু-চারটি মনের কথা...’
পরিচালক লেখেন যে ‘সহজ পাঠের গপ্পো'র সাফল্যের পর কলকাতার প্রায় প্রতিটা হাউস থেকে একের পর এক ছবি তৈরীর প্রস্তাব পান তিনি। কিন্তু মনে মনে ততদিনে ঠিক করে নিয়েছিলেন যে ‘যা হওয়ার হবে, এবার দীনেশ গুপ্তকে নিয়েই ছবি বানাবো। যত টাকাই লাগুক না কেন, যে করে হোক জোগাড় করবই! আমাদের বাংলা ছবি কেন পিছিয়ে থাকবে? কেন আমরা একটা 'গান্ধী' কিংবা 'সিন্ডলার্স লিস্ট' এর মতো ছবি তৈরী করতে পারবনা?ভয় যে পাইনি, তেমনটা নয়। কিন্তু কখনও এক মুহূর্তের জন্যও পিছিয়ে আসিনি। জেদের বশে একের পর এক ছবির অফার ছাড়তে থেকেছি। লক্ষ্য একটাই - দীনেশের বায়োপিক বানানো - এক আকাশ ছোঁয়া স্কেলে!’
তিলে তিলে সেই লক্ষ্যে পৌঁছে ছিলেন, কিন্তু তার মাঝে বিপত্তি। ২০২০ সালে শুটিং শুরু হওয়ার চারদিন আগে হঠাৎ লকডাউন। শুটিং বন্ধ হয়ে যায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য। কোভিডের জেরে চাকরি হারিয়ে সরে দাঁড়ান প্রযোজক। ইতোমধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকার সেট মেটিরিয়াল আমফানে নষ্ট হয়ে গেছে। তার চেয়েও বড়ো ক্ষতি একটি বিশেষ চরিত্রের অভিনেতা সৌমিত্র বাবুর মৃত্যু! ২০২১ এ আবার নতুন করে শুরু করার চেষ্টা করেন কিন্তু পুনরায় লকডাউন। ২০২২ সালে চূড়ান্ত অনভিপ্রেত সব চড়াই উৎরাই এর মধ্যে দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যান।
পরিচালক লেখেন, ‘সম্প্রতি কথা প্রসঙ্গে একজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন- সবাই ছবি বানাচ্ছে। অথচ সহজ পাঠের এত বছর পরেও আমি কিছু বানালাম না আর! সেটা আমার খারাপ লাগে কিনা? খারাপ অবশ্যই লাগে! বিশেষত এমন অমানুষিক লড়াই আর পরিশ্রমের পর নিশ্চয়ই কষ্ট হয়। কিন্তু আমি কখনই চাইনি n সংখ্যক ছবির ভিড়ে আমার কাজটাও (n+1) হয়ে হারিয়ে যাক। তাই আমার জেদ বা ইচ্ছে সেই কষ্ট বা খারাপ লাগার চেয়ে অনেক বেশী শক্তিপূর্ণ! আমি জানি আমি কি বানাতে চাই এবং তার জন্যে কতটা মূল্য দিতে হতে পারে’।
আরও পড়ুন- Jeetu kamal Birthday: জীতুর জন্মদিনে শুভেচ্ছা শ্রাবন্তীর, নীরব নবনীতা...
অবশেষে এই বছর আশার আলো দেখতে পেলেন মানস মুকুল পাল। দীনেশ গুপ্তর বায়োপিকের কাজ আবার শুরু হবে বলে জানান পরিচালক। তিনি জানান যে খুব শীঘ্রই ছবির কাজ শুরু হবে। পরিচালক জানালেন, ‘আবার কোনও বিপর্যয় না ঘটলে হয়তো দেখা হবে আগামী বছরেই।আর আপনারা যাঁরা প্রতিনিয়ত খোঁজ নিয়েছেন, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ। দীর্ঘ বছর ধরে দাঁত কামড়ে লড়ে যাওয়ার জন্য এই নিঃশর্ত ভালবাসা নিঃশব্দে রসদ জুগিয়ে যায়’।