Home> বিনোদন
Advertisement

তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের নজরে OTT প্ল্যাটফর্ম, কী বলছেন বাংলার পরিচালকরা?

এ বার থেকে অনলাইনে পরিবেশিত সমস্ত কনটেন্টের জন্য কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হবে। 

তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের নজরে OTT প্ল্যাটফর্ম, কী বলছেন বাংলার পরিচালকরা?

রণিতা গোস্বামী:  নেটফ্লিক্স, আমাজন সহ সমস্ত OTT প্ল্যাটফর্মের কনটেন্টের রাশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকি অনলাইন নিউজকে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ বার থেকে অনলাইনে পরিবেশিত সমস্ত কনটেন্টের জন্য কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হবে। সোমবার নরেন্দ্র মোদী সরকারের এই সংশোধনীতে স্বাক্ষর করে তা অনুমোদন করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এবিষয়ে কী বলছেন বাংলা পরিচালকরা?

fallbacks

পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য: এটা তো হওয়ারই ছিল, আজ নয়ত কাল। দেশটা ইন্দিরা গান্ধীর এমার্জেন্সি পিরিয়ডের ভারতবর্ষের মত হয়ে যাবে ধীরে ধীরে। আরেকটা ইরান হয়ে যাবে। এটার জন্য তৈরিই আছি। সারা পৃথিবীতেই বিভিন্ন মাধ্যমে যৌনতা উঠে আসছে। OTT-তে আর কতটুকু যৌনতা থাকে! অনেকের মনে হচ্ছে OTT-তে যৌনতার জন্যই শুধু দেশটা উচ্ছন্নে যাচ্ছে। আর কোনও সমস্যা নেই। বাচ্চাদের হাতে ফোন যাচ্ছে কেন? যাওয়ার তো কথা নয়, বাবা-মায়ের দেখা উচিত বিষয়টা। এটা মধ্যবিত্তের একটা ছুতো। নিজেরা বাচ্চাদের ঠিক করে বড় করতে না পেরে OTT-তে যৌনতার ছুতো দেখিয়ে লাভ নেই।

fallbacks

পরিচালক উৎসব মুখোপাধ্যায়: যে কোনও নিয়ন্ত্রণেরই আমি বিরোধী। কেউ কেন নিয়ন্ত্রণ আনবে? সেন্সর বোর্ডের ভূমিকা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে। কিন্তু কিছু করার নেই। এটা মেনে নিয়েই চলতে হয়। আমাদের দেশের সেন্সর বোর্ড কিন্তু আদপে সার্টিফিকেশন বোর্ড। কোন জিনিস বাদ পড়বে তা সেন্সর বোর্ডের আয়ত্তে পড়ার কথা নয়। কোনটা কোন বয়সের মানুষ দেখবে, সেন্সর বোর্ড বড়জোর সেটা বলতে পারে। কিন্তু সেন্সর বোর্ড যে কাঁচি চালায়, সেটা হওয়া উচিত নয়, কারণ সেটা সার্টিফিকেশন বোর্ড। আমাদের দেশে সর্বত্র নজরদারির রাজনীতি হচ্ছে। আসলে এটা আসে একটা ফোবিয়া থেকে। আমার আড়ালে কী ঘটছে! যেটা আমায় বিপদে ফেলবে না তো? অ্যাডমিনিস্ট্রেশন যত ভয়ে থাকবে তাকে তত নজরদারি চলবে। এটা খুবই ভয়ানক। গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেকের কথা বলার অধিকার রয়েছে, এবার সেটাও নিয়ন্ত্রণে চলে এল। ক্ষমতার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। এটা গণতান্ত্রিক কাঠামোর পরিপন্থী। শিল্পীরা তাঁদের শিল্পের মাধ্যমে দর্শকদের সচেতন করে দেয়, সেটা করা যাবে না। 

বাচ্চাদের হাতে ফোন দেওয়া যাবে না, সেটাও বলা যায় না। কারণ, লকডাউনে পড়াশোনার মাধ্যমই এখন স্মার্ট ফোন। এদিকে অনলাইনে অবাধ যৌনতা থাকলে বাচ্চারা দেখে ফেলতে পারে, সেটা সত্যি। তবে আবার তার জন্য কোনও শিল্পী অবাধ যৌনতা তার কনটেন্টে দেখাবেন না, সেটাও বলা যায় না। তাহলে তো আবার তাঁর কথা বলার অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয়ে যায়। বাবা-মাকে খেয়াল রাখতে হবে, বাচ্চা কী দেখবে, না দেখবে। এটার সহজ কোনও সমাধান নেই, বাবা-মাকে আরও সচেতন হতে হবে। 

fallbacks

পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত: কিছু বিষয় যেগুলো সহজেই দেখিয়ে দেওয়া হয়, সেগুলো হয়ত বন্ধ হবে। তবে তার জন্য যে সমস্যাটা হবে, সেটা হল মত প্রকাশের অধিকার থাকবে না। সরকারের পক্ষে হলে দেখানো যাবে, বিপক্ষে হলে সেটা হয়ত দেখানো যাবে না। এবার কীভাবে কী করা হচ্ছে, সেটা দেখতে হবে। কারা এই বিষয়টার অংশ হবে, কারা দেখবে পুরো বিষয়টা, সেটার উপর এটা অনেকটাই নির্ভর করছে। যদি বিচক্ষণ কেউ বিষয়টার দায়িত্বে থাকে, তাহলে হয়ত অতটা সমস্যা হবে না। এটা তো হওয়ারই ছিল আমাদের দেশে। 

fallbacks

পরিচালক, অভিনেতা সৌরভ চক্রবর্তী : শিল্পের উপর যখন কোনও সেন্সরশিপ আসে, সেটা যে কারণে আসে, পরে দেখা যায় সেটা আর মেলে না। প্রচুর এমন অ্যাপ রয়েছে, যাঁর যৌন কনটেন্ট বিক্রি করে। কতটা যৌনতা দেখাব, কতটা দেখাব না সেটার জন্য যদি সেন্সরশিপ হয়, আলাদা বিষয়। কিন্তু পরে যদি দেখা যায়, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগছে বলে কিংবা রাজনীতির মতাদর্শের কারণে কোনও কনটেন্ট বাদ গেল তাহলে তো ক্ষতি। আমরা যাঁরা গল্প লিখি, পরিচালনা করি বা প্রযোজনা করি তাঁদেরকে এবার থেকে কী বাদ যাবে, কী যাবে না, সেটা ভেবে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে হবে। এতকিছু ভেবে গল্প লিখলে গল্প একপেশে হয়ে যায়। কনটেন্টের মাধ্যমে ভায়োলেন্স ছড়াচ্ছে যদি দাবি করা হয়, তাহলে তো চারিদিকেই সেন্সর বোর্ড বসানো উচিত। চারিদিকে বিভিন্ন ছোটবড় অ্যাপে যৌনতা দেখানো হয়, সেটা যদি আটকানো যায়, তাহলে স্বাগত। তবে যদি কোনও বিতর্কিত গল্প নিয়ে কিছু বানানোর কারণে আটকে যায়, সেটা ঠিক নয়। 

fallbacks

 পরিচালক সৌমিক হালদার: আমরা মনে হয় এতে গল্প বলাটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে যাবে। এটা একটা মাধ্যম ছিল, যেখানে মন খুলে গল্প বলা যেত। এই নিয়ন্ত্রণটা ওয়েব প্ল্যাটফর্মে না আনলেই ভালো হত বলে আমার মত। যাঁরা অকারণেই যৌনতা দেখান, এই সুযোগটা নিয়ে যা খুশি দেখান, সেটাকে আমি সমর্থন করি না। তবে যদি গল্পের প্রয়োজনে কিছু হয়, যেমন মির্জাপুরে যদি ওই ভাষা ব্যবহার না হত, তাহলে মির্জাপুরটা মির্জাপুর হয়ে ওঠে না। আমরা যদি স্থানীয় ভাষা ব্যবহার না করতে পারি, তাহলে তো সমস্যা। এতে গল্প বলার উপর কিছুটা হলেও তো নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে।

আরও পড়ুন-মাদক মামলায় অর্জুন রামপালের প্রেমিকা গ্যাব্রিয়েলা ডেমেট্রিয়াডেসকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ NCB-র

Read More